পণ্যের চাহিদা তৈরীতে সঠিকভাবে পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা জরুরি
জীবন আহমেদ। দেশের শীর্ষ প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন। ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং সেক্টরে তার রয়েছে দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এসএ টিভি অনলাইনের সাথে কথা বলেছেন জীবন আহমেদ।
শুরুতেই ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাই?
জীবন আহমেদ : ব্যক্তি জীবন আহমেদ সম্পর্কে জানতে চাইলে আপনাকে চলে যেতে দক্ষিণের বিভাগ বরিশালে, কারণ আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষা জীবনের অনেকটুকু অংশজুড়ে আছে বরিশাল। পরবর্তীতে কলেজের গন্ডি পাড় হয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে আসা ঢাকায়, এখান থেকেই কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর আমার গ্রাজুয়েশন শেষ করি এবং এর পরপরই আমি মূলত আমার কর্মজীবনে প্রবেশ করি।
একজন কম্পিউটার সাইন্সের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও ব্র্যান্ডিং জগতে ক্যারিয়ার গড়ার কারণ কী?
জীবন আহমেদ : আসলে ছাত্রজীবন থেকেই আমার ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কের প্রতি আকর্ষণ ছিল এবং যার ফলে সৃজনশীল কাজের চর্চার পাশাপাশি সৃজনশীল ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ ছিল; তখন থেকেই আমি নানানভাবে ব্র্যান্ডিং সংক্রান্ত কাজ যেমন, স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং, কন্টেন্ট প্ল্যানিং, কন্টেন্ট তৈরী, ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক, এডভার্টাইসিং ইত্যাদির সাথে জড়িত হয়ে পরি এবং সত্যি কথা বলতে আমি কাজটাকে উপভোগ করা শুরু করি, এইতো এইভাবেই শুরু।
নন-মার্কেটিয়ার হয়েও সফল ব্র্যান্ড ম্যানেজার হওয়ার গল্পটা কেমন ছিল?
জীবন আহমেদ : প্রথমে বলি, আমাকে নিজেকে সফল বলতে ইচ্ছুক না, কারণ সফলতার কেন শেষ নেই, আমার ক্যারিয়ার শুরু হয় একজন আইটি অফিসার হিসেবে, কিন্তু ইচ্ছার পুরো জায়গা জুড়েই ছিল মার্কেটিং নিয়ে, যার ফলশ্রতিতে বিভিন্ন অনলাইন এডুকেশনাল প্লাটফর্ম থেকে মার্কেটিং স্কিল ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্স করি পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং, এবং পাবলিক রিলেশন সংক্রান্ত অনেক কোর্স করি দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠান থেকে।
এছাড়াও নানান সেমিনার, ব্র্যান্ড সংক্রান্ত প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে থাকি অন্যান্য কাজের পাশাপাশি। যার ফলে দেশ সেরা মার্কেটিয়ারদের সাথে যোগাযোগ তৈরী হয়। পরবর্তীতে ব্র্যান্ডিং টিমে জয়েন করার জন্য চেষ্টা শুরু করি। ৩ বছরে ১৬ বার চেষ্টার পরে ১৭তম বার কাজ করার সুযোগ পাই এবং এরই মাধ্যমে শুরু হয় স্বপ্নের পথচলা। মূলত ব্র্যান্ডিং নিয়ে প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোড়েই আজকের এই জীবন আহমেদ।
ওয়ালটনের ব্র্যান্ডিং টিমের আজকের অবস্থানের পিছনে নিজের কৃতিত্ব কতটুকু যদি বিচার করতে বলা হয়?
জীবন আহমেদ : ওয়ালটনের ব্র্যান্ডিং টিমের আজকের এই অবস্থানের জন্য কোম্পানির উর্ধতন পর্যায় থেকে শুরু করে মার্কেটিংয়ের সাথে জড়িত সকলের অক্লান্ত পরিশ্রম, চেষ্টা এবং একাগ্রতা রয়েছে, কোনো একক কন্ট্রিবিউশন আসলে এতবড় একটা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য কখনোই যথেষ্ট না তবে হ্যাঁ, ওয়ালটনের জন্য নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে সবসময় পাশে ছিলাম এবং আছি।
ব্র্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে কোন অর্জনটি আপনার জীবনের এখন পর্যন্ত অন্যতম বড় সাফল্য বলে আপনি মনে করেন?
জীবন আহমেদ : প্রতিটা অর্জনই অনেক আনন্দের, কিন্তু যে অর্জনটি সবচেয়ে বেশি আপ্লুত করে সেটা হচ্ছে, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের সারাদেশে ৭০ শতাংশ একক মার্কেট শেয়ার অর্জন এবং বাংলাদেশের ‘সেরা রেফ্রিজারেটর ব্র্যান্ড’ হওয়া।
ইলেকট্রনিকস পণ্যে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোই সাধারণত বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে থাকে। সেখানে বাংলাদেশে একটি দেশীয় ব্র্যান্ড রেফ্রিজারেটরের বাজারে ৭০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যা ধরে রেখেছে, এর পিছনে ব্র্যান্ডিং কতটা মোক্ষম ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন?
ব্র্যান্ডিং জিনিসটা খুব চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ, মানুষের কাছে পণ্যের ইনফরমেশন পৌঁছায় কিন্তু ব্রান্ডিং টিমের হাত ধরেই। যে পণ্যের ব্র্যান্ডিং যত সুন্দর হবে, সেই পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ তত বাড়বে । আমি মনে করি, ওয়ালটনের সকল সেক্টরের সমান অবদান আছে আমাদের সকল সাফল্যের পিছনে, তবে হ্যাঁ, পণ্যের চাহিদা তৈরীতে সঠিকভাবে পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা জরুরি।
বাংলাদেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা হিসেবে মানুষের কাছ কেমন রেসপন্স পান?
জীবন আহমেদ : এই জিনিসটা মজার। কারণ মানুষ যখন শুনে যে ওয়ালটনের একজন, তখন তারা আমাদের সফলতার গল্প শুনতে চায়, জানতে চায় আরো ওয়ালটন নিয়ে, তারা নানাভাবে আমাদের অনেক পরামর্শ, উপদেশ দেন, জিনিসগুলো আনন্দের।
কর্পোরেট জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে কার দিক নির্দেশনা সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে?
জীবন আহমেদ : তিনি আর কেউ নন, যার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে নতুন দিনের ওয়ালটন, যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ওয়ালটন আজকে দেশ সেরা টেক কোম্পানি, যার যুগোপুযগী একেকটা সিদ্ধান্ত ওয়ালটনকে ৪০টিরও বেশি দেশে নিয়ে গেছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাননীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও, শ্রদ্ধেয় গোলাম মুর্শেদ স্যার। ওনার প্রতিটি কাজ, প্রতিটি কথা আমার কাছে অনুপ্রেরণার মত। ওনার থেকেই শেখা, কিভাবে কঠোর পরিশ্রম, কাজের প্রতি অধ্যবসায় মানুষকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে। ওনার কাছ থেকেই শেখা কোনো কাজের প্রতি ডেডিকেশন থাকলে, ফোকাস থাকলে একজন ব্যক্তি সফল হবেই। এবং আমি মনে করি, আজকে আমার এই অবস্থানের পিছনে পুরো অবদান তাঁর।
আগামী দশ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?
জীবন আহমেদ : ভবিষ্যতের কথা বলা কঠিন! তবে একটাই ইচ্ছা, ভাল কোথাও নেতৃত্ব দিতে চাই। দেখা যাক ভাগ্যে কি লেখা আছে। তবে আমি বিশ্বাস করি নিজ কর্মই নিজেকে ভবিষ্যতে নিয়ে যাবে।
নতুনদের উদ্দেশ্যে?
জীবন আহমেদ : জীবনে সফল হতে হলে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস থাকতে হবে, পাশাপাশি যে যেই সেক্টরেই কাজ করতে চায় না কেনো, সফল হওয়ার প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে এবং অবশ্যই ধৈর্য ধরে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছনোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোন কাজের পিছনে একনিষ্ঠভাবে লেগে থাকতে হবে, ধৈর্যহারা হওয়া যাবে না কারণ সাফল্য একেবারেই ধরা দিবে না কখনো, দরকার কাজের প্রতি ফোকাস।